কার্যক্রম

তথ্যআপা মূলত একটি সেবাধর্মী প্রকল্প। প্রকল্পের আওতাভুক্ত সেবাসমূহ লক্ষ্যভুক্ত সেবাপ্রত্যাশিদেরকে মূলত প্রকল্পের উপজেলা অফিস তথা তথ্যকেন্দ্র কর্তৃক প্রদান করা হয়ে থাকে। আর তথ্যকেন্দ্রসমূহের জন্য সেবাপ্রদানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, বাস্তবায়ন নির্দেশনা প্রদান, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে প্রকল্পের প্রধান কার্যালয় হতে। সে আলোকে প্রকল্পের কার্যক্রমকে প্রথমতঃ দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা,                          ১) তথ্যকেন্দ্রের কার্যক্রম                                  ২) প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের কার্যক্রম

১) তথ্যকেন্দ্রের কার্যক্রম:

ক)     তথ্যকেন্দ্র (Information Center) এর পরিচিতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো:  

প্রকল্পটির আওতায় সারাদেশের ৪৯০ টি উপজেলায় ইতোমধ্যে অফিস (তথ্য কেন্দ্র) স্থাপন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৯২ টি উপজেলা রয়েছে। সংশোধিত ডিপিপিতে অনুমোদিত অবশিষ্ট দুটি উপজেলায় অচিরেই অফিস স্থাপন করা হবে। প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে ০১ জন তথ্যসেবা কর্মকর্তা, ০২ জন তথ্যসেবা সহকারী এবং ০১ জন অফিস সহায়ক বর্তমানে কর্মরত আছেন। সংশোধিত ডিপিপির প্রভিশান অনুযায়ী খুব শীঘ্রই প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে একজন নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ প্রদান করা হবে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত সেবা প্রদানের জন্য প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে একটি করে ডেক্সটপ, ০২টি ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার এবং ইউপিএস সরবরাহ করা হয়েছে। নিরবিচ্ছিন ইন্টারনেট সংযোগের জন্য বিটিসিএল কানেকশান, ওয়াইফাই কানেকশান, ০২ টি রাউটার, ল্যাপটপের জন্য ০২ টি মডেম সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য ০১ সেট করে ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর  গ্লুকো মিটার, ব্ল্যাড প্রেসার পরিমাপ যন্ত্র, উচ্চতা ও ওজন পরিমাপ যন্ত্র, রক্তের অক্সিজেন পরিমাপ যন্ত্র, শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ যন্ত্র এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি সহায়ক একটি স্মার্টফোন প্রদান করা হয়েছে। তথ্যকেন্দ্রের সাথে সেবাগ্রহীতাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগের স্বার্থে টিএ্যান্ডটি সংযোগ ছাড়াও একটি করে মোবাইল ফোন প্রদান করা হয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ, টেলিফোন এবং মোবাইলের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান করা হয় যাতে সেবাপ্রদানে কোন রকম সমস্য না হয়। এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কাজটি যাতে অনলাইন এবং অফলাইনে প্রদান করা যায় সেজন্য তথ্যআপা হেল্থ এ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সেবাগ্রহীতাদের তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনার জন্য একটি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (MIS) উন্নয়ন করা হয়েছে।

খ)       যে সকল সেবা প্রদান করা হয়:

 লক্ষ্যভুক্ত মহিলাদের জন্য ৬টি বিষয়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সেবা প্রদান করা । যেমনঃ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, ব্যবসা, আইনী সহায়তা এবং জেন্ডার।

i.  স্বাস্থ্য সংক্রান্তঃ তথ্যকেন্দ্রসমূহ হতে বিনামূল্যে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ইন্টারনেটভিত্তিক নিম্নলিখিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাসমূহ প্রদান করা হয় :

  • ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা
  • ওজন পরীক্ষা
  • ডায়াবেটিস পরীক্ষা
  • রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ পরীক্ষা
  • শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা

প্রত্যেক সেবাগ্রহীতার জন্য একটি হিসাব নম্বর তৈরি করে তাকে প্রদত্ত সেবার তথ্য সেভ করে রাখা হয় এবং তার সেবা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন মোবাইলে মেসেজ আকারে এবং ই-মেইলে তাকে প্রদান করা হয়। উপরন্তু সেভ করে রাখা এ তথ্য কোন সেবাগ্রহীতা পরবর্তীতে দেখতে চাইলে বা প্রিন্ট নিতে চাইলে সেটি প্রদান করা হয়।

উপরন্তু তথ্যআপা হেল্থ এ্যাপসের মাধ্যমে কোভিড ১৯ স্ক্রিনিং করা হয় এবং কোভিড ঝুকি বিষয়ে পূর্ভাবাস প্রদান করা হয়। এছাড়া, কোভিড ভেক্সিনেশনের নিবন্ধন করা হয়।

ii.  শিক্ষা সংক্রান্তঃ ইন্টারনেট ব্যবহার করে শিক্ষা বিষয়ক যে সমস্ত সেবা প্রদান করা হয়

  • চাকুরীর খবর
  • বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য
  • ভর্তি ফরম পূরণ

এছাড়া ক্যারিয়ার বিষয়ক পরামর্শসহ বিভিন্ন রকম সেবা প্রদান করা হয়।

iii.   কৃষি বিষয়ক যে সকল সেবা প্রদান করা হয়:

তথ্যআপারা গ্রামীণ নারীদের প্রয়োজনীয় কৃষি সংক্রান্ত পরামর্শ প্রাপ্তিতে সহায়তা করেন। উঠান বৈঠকে কৃষি কর্মকর্তাদেরকে রিসোর্স পার্সন হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে গ্রামীণ নারীদেরকে কৃষি বিষয়ক পরামর্শ প্রদান করা হয় এবং কোন নারী তার কৃষির সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় কৃষি কর্মকর্তাকে অবহিত করে তার সমাধানে পরামর্শ পাচ্ছেন। তাছাড়া তথ্যআপারা ডোর টু ডোর সেবার আওতায় গ্রামীণ নারীদের কৃষি সংক্রান্ত সমস্যা জেনে তাদের সমস্যা আক্রান্ত কৃষির ছবি/ভিডিও ধারণ করে উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদেরকে তা প্রেরণ করে পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং নারীদেরকে প্রদান করেন। এছাড়া অনেকক্ষেত্রে তথ্যআপারা সংশ্লিষ্ট কৃষি ভূমিতে গিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে গ্রামীণ নারীদের অনলাইনে সংযুক্ত করে তাৎক্ষণিক পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ করে দেন।

iv. ব্যবসা সংক্রান্ত যে সকল সেবা প্রদান করা হয়:

তথ্যআপা প্রকল্প (২য় পর্যায়) যে ০৫ টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঘোষণা করেছে এর মধ্যে তৃতীয়টি হচ্ছে তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে ই-কমার্স সহায়তা প্রদান। এ লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত, কমসুবিধাপ্রাপ্ত দরিদ্র ও অসহায় নারীদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য ই-কমার্স পদ্ধতিতে বিক্রয়ের লক্ষ্যে প্রকল্পটির আওতায় লালসবুজ ডট কম (www.laalsobuj.com) নামের একটি ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস চালু করা হয়েছে। সারাদেশব্যাপী তথ্যআপা প্রকল্পের নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে ই-কমার্স কে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তৃণমূল নারীদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে সারাদেশের প্রতিষ্ঠিত তথ্যকেন্দ্রে কর্মরত তথ্যআপাদেরকে ই-কমার্স বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এসব প্রশিক্ষিত তথ্যআপারা উপজেলায় উদ্যোক্তা নির্বাচন, তাদের মোটিভেশন প্রদান, মার্কেটপ্লেসে তাদের নিবন্ধনকরণ ও তাদের পণ্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপন কাজে সহায়তা করছে। তথ্যআপারা ই-কমার্সে গ্রামীণ নারীদের সবরকম সহায়তা প্রদান করছেন। পাশাপাশি কোন নারী ব্যবসার জন্য লাইসেন্স প্রাপ্তির চেষ্টা করলেও তথ্যআপারা সে বিষয়েও তাদেরকে পরামর্শ প্রদান করেন।

v এবং vi) আইন ও জেন্ডার বিষয়ক যে সকল সেবা প্রদান করা হয়:

নারীদের প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য দূর করার জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ বিভিন্ন আইন, নীতি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও এ সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে অনেকক্ষেত্রে নারী এ সকল আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তথ্যআপারা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতায়ন এবং বিচার প্রার্থীতায় নারীর অভিগম্যতা (Access) নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে থাকেন। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদেরকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের সাথে যোগাযোগ, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ স্টেশনের সাথে যোগাযোগ এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার স্থানীয় কার্যালয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করেন। নারীদের অধিকার, পরিবারে তার ভূমিকা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, ফতোয়া ও পারিবারিক সহিংসতায় করণীয় বিষয়ে তাদেরকে সচেতন করার জন্য উঠান বৈঠক ও ডোর টু ডোর সেবার মাধ্যমে তথ্যআপারা পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। এ বিষয়ে সরকারের যে বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে সেগুলো অবহিত করার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত জরুরি সেবার নম্বরসমূহ তাদেরকে প্রদান করেন যেন যে কোন জরুরি মুহুর্তে তারার সেগুলো থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারেন।

অন্যান্য সেবাসমূহ:

উপরোক্ত ০৬ টি ক্ষেত্রে সেবাপ্রদান ছাড়াও তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর অন্যান্য যে সকল সেবাসমূহ প্রদান করা হয় তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ফ্রি ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল আদান প্রদান, বিদেশে অবস্থিত নিকটাত্নীয়ের সাথে স্কাউপিতে কথা বলা, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্যোগের আবেদন ফরম অনলাইনে পূরণ ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকেন তথ্যআপারা।

উপরোল্লিখিত সেবাসমূহ মূলত ০৩ টি পদ্ধতিতে প্রদান করা হয়। যেমন,

১) উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত তথ্যকেন্দ্র হতে প্রত্যাশিদেরকে সেবাপ্রদান:

এক্ষেত্রে সেবাপ্রত্যাশিগণ তথ্যকেন্দ্রে এলে তাদেরকে প্রকল্পের আওতাভুক্ত সেবাসমূহ প্রদান করা হয়। সাধারণ তথ্যকেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার মহিলাগণ তথ্যকেন্দ্র হতে সেবা গ্রহণ করে থাকেন। এছাড়া যে সমস্ত নারীরা বিভিন্ন সময় উপজেলায় অবস্থিত সরকারি অফিসসমূহে সেবা গ্রহণ করতে আসেন তারাও তথ্যকেন্দ্র হতে সেবা গ্রহণ করে থাকেন।

২) তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ডোর টু ডোর প্রদ্ধতিতে সেবাপ্রদান:

এক্ষেত্রে তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও তথ্যসেবা সহকারীগণ গ্রামের মহিলাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা প্রদান করে থাকেন। তাদের সাথে ল্যাপটপ এবং মডেম থাকে। তারা গ্রামে ল্যাপটপ ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করে তাদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী তাদেরকে প্রকল্পের আওতাভুক্ত আওতাভুক্ত সেবাসমূহ প্রদান করেন। এ প্রক্রিয়ায় গ্রামীণ মহিলারা নিজ ঘরে বসেই তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছেন এবং এই সেবা তাদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে সাহায্য করছে।

৩) উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মুক্ত আলোচনা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা:

উপরোক্ত ০২ টি পদ্ধতিতে সেবাপ্রদানের পাশাপাশি উঠান বৈঠক আয়োজন করে গ্রামীণ তৃণমূল মহিলাদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হচ্ছে। প্রতিটি উঠান বৈঠকে সাধারণত ৫০ জন গ্রামীণ মহিলা অংশগ্রহণ করে থাকেন। মাসে প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে ২টি করে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উঠান বৈঠকে গ্রামীণ মহিলাদের জীবন ও জীবিকা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় যেমন: স্বাস্থ্যগত সমস্যা, বাল্যবিবাহ, ফতোয়া, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, আইনগত সমস্যা এবং ডিজিটাল সেবাসমূহের নানাদিক (ই-মেইল, ভিডিও কনফারেন্স) সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

তথ্যকেন্দ্রে কর্মরত তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও তথ্যসেবা সহকারীগণ উঠান বৈঠকে উপস্থিত গ্রামীণ মহিলাদের ইন্টারনেট বাস্তব ব্যবহারের মাধ্যমে সেবাপ্রাপ্তির পদ্ধতি প্রদর্শন করেন। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সরকারি আইটি বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ইত্যাদি বিষয়ে রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মুক্ত আলোচনা করে থকেন। এছাড়া স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা, নারী আইনজ্ঞ, সমাজসেবী, সমাজের নেতৃত্বদানকারী মহিলারাও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা যেমন: বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, যৌতুক নিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা এবং নারীনীতি সম্পর্কে মুক্ত আলোচনা করেন।

২) প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের কার্যক্রম:

প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের প্রধান, প্রধান কার্যক্রমগুলো হল-

  • সারাদেশের সকল উপজেলায় তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা;
  • আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম;
  • দ্রব্য, সেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সেবা ক্রয়কার্য সম্পাদন;
  • প্রকল্প এবং প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা;
  • দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে সভা ও সেমিনার এবং মেলায় অংশগ্রহণ সংক্রান্ত;
  • ওয়েবপোর্টাল, এমআইএস, তথ্য ভান্ডার, আইপি টিভি ইত্যাদি সফটওয়্যার উন্নয়ন;
  • তথ্যকেন্দ্রের সেবাপ্রদানসহ সকল কার্যক্রম মনিটরিং;
  • তথ্যআপা, সেল্ফহেল্পগ্রুপ, মীনা গ্রুপ এবং প্রকল্প পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাগণের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা;
  • রিপোর্টিং কার্যক্রম;
  • মন্ত্রণালয়, জাতীয় মহিলা সংস্থা ও অন্যান্য সরকারি অফিসের সাথে যোগাযোগ রক্ষা।

 (৫) প্রকল্পের সেবাগ্রহীতা:

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যযোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পটিতে মূলত Information Technology এর উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত ও কম সুযোগপ্রাপ্ত মহিলারা যেন Information Technology এর ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে পারে ও সহজে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য পেতে পারে সেই বিষয়টির উপর জোর দেয়া হয়েছে ৷

প্রকল্পের শিরোনাম থেকেই এটা পরিষ্কার যে এ প্রকল্পটি শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য৷ ক্ষেত্র বিশেষে নারী ও শিশুর উন্নয়নের কথাও প্রকল্প দলিলে বলা হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে প্রকল্পের সেবাগ্রহীতাগণ হচ্ছে:

১৷       উপ-শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত এবং কম সুযোগপ্রাপ্ত নারীগোষ্ঠী প্রকল্পের মূল সুবিধাভোগী। বিশেষ করে যে সকল মহিলাদের তথ্যপ্রযুক্তিতে তথা ইন্টারনেটে অভিগম্যতা (Accessibility) নেই এবং তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধাকে তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছেন না তথ্যপ্রযুক্তিকে তাদের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা এ প্রকল্পের মৌলিক লক্ষ্য। প্রকল্পের লক্ষ্যভুক্ত এ সকল মহিলাদেরকে সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে যারা তথ্যকেন্দ্রের আশ-পাশের এলাকাতেই অবস্থান করেন তারা সাধারণত তথ্যকেন্দ্রে এসে সেবা গ্রহণ করে থাকেন। তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও তথ্যসেবা সহকারীদের মাধ্যমে নারী ও শিশু বিষয়ক যেকোনো তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত নারীগোষ্ঠী তথ্যকেন্দ্রের সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন। তবে যারা তথ্যকেন্দ্র হতে দূরে বসবাস করেন তাদের জন্য প্রকল্পের আওতায় ডোর-টু-ডোর সেবা এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

 ২৷       তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর তথ্যসেবা বিতরণ এবং গ্রামীণ মহিলা জনগোষ্ঠী কর্তৃক সেই সেবা গ্রহণে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উদ্বুদ্ধকরণ আলোচ্য প্রকল্পের অন্যতম কার্যক্রম। বাংলাদেশের ৪৯২টি উপজেলার ০১ (এক) কোটি মহিলাকে এই সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের আওতায় আনার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান আছে।

৩।      তথ্যআপা প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর অন্যতম লক্ষ্য গ্রামীণ নারীদেরকে তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে ই-কমার্স সহায়তা প্রদান করা। আর সে লক্ষ্য পূরণের জন্য গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত ও সংগৃহীত পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রয়াসে লালসবুজ ডট কম নামের একটি ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস নির্মাণ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে আগ্রহ রয়েছে এমন উদ্যোগী মনোভাবাপন্ন নারীগণকে উক্ত মার্কেটপ্লেসে নিবন্ধনের মাধ্যমে ব্যবসা করার জন্য মোটিভেশন প্রদান করা হচ্ছে। গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাগণ লালসবুজ ডটকম প্ল্যাটফর্মে তাদের পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের এ প্রচেষ্টায় শামিল হয়ে তাদের ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়াকে বেগবান করবেন এটাই প্রত্যাশা।

৪৷       তথ্য ভান্ডার (Knowledge Bank) তৈরির মাধ্যমে এক বিপুল জ্ঞান ভান্ডার সকলের জন্য উম্মুক্ত করা হয়েছ। মহিলাদের মধ্যে যারা তথ্যপ্রযুক্তিতে কিছুটা দক্ষতাসম্পন্ন এবং যাদের মধ্যে উদ্যেগী মনোভাব বিদ্যমান, তারাই হচ্ছেন তথ্য ভান্ডার (knowledge bank) এর প্রধান সেবাগ্রহীতা ৷ তবে সাধারণভাবে তথ্য ভান্ডার এর সেবা সকল নারীর জন্যই প্রযোজ্য। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক তথ্য, রান্না বিষয়ক অথবা দৈনন্দিন জীবনের নানা দরকার মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, প্রয়োজনীয় আইনী সহায়তা, শিশু বিষয়ক নানান তথ্য, চাকুরী অনুসন্ধান ইত্যাদি সকল ধরনের তথ্যের জন্য এই নারীগোষ্ঠীর সামনে তথ্য ভান্ডারের দুয়ার থাকছে খোলা ৷ এর পাশাপাশি শিক্ষাবিদ, গবেষক, নীতি নির্ধারক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ নির্বিশেষে সকলেই এই জ্ঞান ভান্ডার ব্যবহার করে একদিকে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে পারছেন, একইসাথে দেশের নারী উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের একটি সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে এই তথ্য ভান্ডার (Knowledge Bank) কাজ করছে ৷